স্থানীয় পর্যায়ে সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজন মেটাতে বসার স্থান বা আসন তৈরি করা সবসময় সম্ভব ও সহজ। এই ধরনের আসনগুলো স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োজনে কিংবা লেট্রিন-কে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ব্যবহার উপযোগী করার জন্য তৈরি করা হতে পারে।
যে কোন ধরনের উপযোগীকরণ বা চাহিদা অনুযায়ী কোন কিছু পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে একটি সাধারণ নিয়ম মেনে কাজটা করতে হবে। সেই সাধারণ নিয়মটি হলো যে আসনটি তৈরি করা হচ্ছে সেটা অবশ্যই হুইলচেয়া বা খাটের একই উচ্চতায় হবে। স্বতন্ত্র ব্যক্তির চাহিদাকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। আসনের নকশা এমনভাবে করতে হবে যেন একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তার স্বাস্থ্যবিধি পালন করার জন্য মর্যাদার সাথে ও নিরাপদে একটি আসন থেকে দাঁড়ানো কিংবা হুইলচেয়ারে যাওয়া এবং হুইলচেয়ার থেকে আসনে যাওয়া ও আসার কাজটি করতে পারেন।
আসন বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে, তবে কী ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হবে কিংবা কীভাবে তৈরি করা হবে সেটা মূলত নির্ভর করে কী ধরনের কাজে ব্যবহারের জন্য আসনটি তৈরি করা হচ্ছে (বসার জন্য, ধোওয়ার কাজে ব্যবহার করার জন্য নাকি কমোডে ব্যবহারের জন্য): সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে তৈরি করা আসন, কাঠের তৈরি আসন কিংবা প্লাস্টিক দিয়ে নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার উপযোগী আসন তৈরি করা যেতে পারে এছাড়াও সিরামিক দিয়েও আসন তৈরি করা যেতে পারে।।
আসন তৈরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ দেশে সাধারণ সাত ধরনের উপকরণ ব্যবহার করতে দেখা যায় (কনক্রিট/সিমেন্ট নির্মিত, ধাতব, প্লাস্টিক, রাবার, কাঠ, বাঁশ এবং কাগজ) যা এখানে ৫টি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে (টেকসইতা, দাম, স্বাস্থ্যসম্মত, আরামদায়ক ও ভার বহন ক্ষমতা) ভাগ করা হলো।
কনক্রিট ও ধাতব উপকরণে তৈরি আসনের বৈশিষ্ট্য হলো:
টেকসই
দাম বা নির্মাণ খরচ বেশি
রং করা হলে স্বাস্থ্যসম্মত; কিন্তু রং করা না হলে তেমন একটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়
কম আরামদায়ক
ভারবহন করার ক্ষমতা ভালো
প্লাস্টিকের তৈরি আসনের বৈশিষ্ট্য হলো:
টেকসইতা ভালো
উচ্চ মূল্য
শুরুর দিকে স্বাস্থ্যসম্মত হলেও অচিরেই রোদ ও তাপে ফাটল ধরে ও রং ঝলসে যায়
বেশ আরামদায়ক
ভার বহন ক্ষমতা ভালো
রাবারের তৈরি আসনের বৈশিষ্ট্য হলো:
টেকসইতা ভালো
দাম বা নির্মাণ খরচ মাঝারি
স্বাস্থ্যসম্মত
আরামদায়ক
ভারবহন ক্ষমতা কম
কাঠের তৈরি আসনের বৈশিষ্ট্য:
টেকসইতা ভালো
দাম বা নির্মাণ খরচ মাঝারি
রং বা বার্ণিশ করা হলে স্বাস্থ্যসম্মত
আরামদায়ক
ভারবহন ক্ষমতা ভালো
বাঁশের তৈরি আসনের বৈশিষ্ট্য:
টেকসইতা কম
দাম বা নির্মাণ খরচ কম/ কখনো কখনো প্রায় নাই বললেই চলে
রং বা বার্ণিশ করা হলে স্বাস্থ্যসম্মত
আরামদায়ক বিবেচনায় চলে
ভারবহন ক্ষমতা ভালো
কাগজের তৈরি আসনের বৈশিষ্ট্য:
টেকসইতা কম, বিশেষ করে যদি ভিজে যায়
দাম বা নির্মাণ খরচ কম
রং বা বার্ণিশ করা হলে স্বাস্থ্যসম্মত
আরামদায়ক
ভারবহন ক্ষমতা ভালো
উপরে উল্লেখিত প্রতিটি উপাদানের আসনের তথ্যগুলো দেশ ভেদে এবং স্থানভেদে ভিন্ন হওয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে পুনঃযাচাই করে নিতে হবে। তবে এখানে দেয়া তথ্যগুলো ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যা আপনাকে কোন একটি নির্দিষ্ট ধরনের উপাদান বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
এখানে বিভিন্ন ধরনের আসন তৈরি বা প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগীকরণের জন্য কিছু পরামর্শ বা টিপস দেয়া হলো।
গোসল করার আসন তৈরির ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো:
সহায়তা ছাড়া উঠে দাঁড়াতে পারেন না কিংবা দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না এমন ব্যক্তির জন্য আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি একটি উপকরণ যা তাদেরকে মর্যাদার সাথে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে সহায়তা করে;
এই ধরনের আসন ওয়াশরুমের মেঝেতে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা যেতে পারে; উদাহরণস্বরূপ কুয়ার চারপাশে থাকা মেঝেতে স্থাপন করা যায়।
স্থায়ীভাবে স্থাপন করা না হলে এর ওজন এমন হওয়া দরকার যাতে সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানো যায়। আকার কেমন হবে সেটা ব্যবহারকারীর সাথে অবশ্যই পরামর্শ করে নিতে হবে। আসনের উচ্চতা কম হলে তাতে বসে মেঝেতে কাজ করা সহজ হয়, কিন্তু এই ধরনের আসন থেকে হুইলচেয়ার কিংবা বিছানায় যাওয়া বা ফিরে আসার কাজটা একাকী করা কঠিন হয়;
ওয়াশরুমের মধ্যে পাশে হাতে ধরার রেলিং অবশ্যই তৈরি করতে হবে যাতে করে স্থানান্তর ও গোসল করার জন্য ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
স্থানান্তরযোগ্য/ অস্থায়ী কমোড আসন:
যুক্তিসঙ্গত দামে স্থানীয়ভাবে তৈরি কমোডে ব্যবহারের জন্য অস্থায়ী আসন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্বাধীনতা দেয় এবং এটি আরামদায়কও বটে;
এই ধরনের আসন প্লাস্টিকের চেয়ার কিংবা কাঠ দিয়েও বানানো যেতে পারে। এবং এতে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে যেখানে একটি পাত্র বসানো থাকে;
কাঠ দিয়ে তৈরি করা হলে অবশ্যই রং কিংবা বার্ণিশ করতে হবে। এতে আসনটি পরিষ্কার করা সহজ হবে ও পানিও জমে থাকতে পারবে না (কাঠ পঁচবে না);
তৈরি করার সময় এতে একটা ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে যাতে করে সামনের দিক থেকে হাত দিয়ে মলদ্বার পরিষ্কার করা যায় (তবে এই ধরনের ফাঁকা জায়গা রাখার সময় মনে রাখুন যে ধারগুলো যেন ঘষে মসৃন করে দেয়া হয় যাতে ব্যবহারের সময় হাতে না লাগে)।
টয়লেটের আসনের জন্য
একটি প্রচলিত টয়লেট সিট রং করা কাঠের কাঠামো দিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করা যেতে পারে; যদি কোন কারণে দেয়ালে হান্ডরেইল বা হাতে ধরার রেলিং টয়লেটের দেয়ালে লাগানো সম্ভব না হয়;
একটি স্কোয়াট টয়লেটও (প্যান টয়লেট) সামনে হ্যান্ডরেইল লাগিয়ে কিংবা এর উপর একটি প্লাস্টিক বা কাঠের চেয়ার বসিয়ে একে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করা যেতে পারে;
টয়লেট সিটের উচ্চতা এমন হতে হবে যেন, একজন ব্যবহারকারী:
সহজে বসতে এবং উঠে দাঁড়াতে পারে;
বসা থাকা অবস্থায় উভয় পা আরামদায়কভাবে মেঝেতে রাখতে পারে।
টয়লেটের আদর্শ উচ্চতা কী হবে সেটা ব্যবহারকারীর উচ্চতা, তার শারীরিক চাহিদা এবং তিনি কীভাবে টয়লেটে বসেন ও টয়লেট থেকে উঠেন তার উপর নির্ভর করে। কোন দেশে জাতীয়ভাবে কোন আদর্শ উচ্চতা অনুসরণ করা হয় কিনা সেটা জানার জন্য ওই দেশের স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ওয়াশরুম কিংবা লেট্রিনের পরিকল্পনা ও ডিজাইন করার সময় টয়লেট সিটের সামনে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে যাতে করে একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নিজেকে হুইলচেয়ার থেকে টয়লেটের সিটে স্থানান্তর করতে এবং আবার হুইলচেয়ারে ফিরে আসতে পারেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে ১৫০ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধ পরিমাণ জায়গা খালি রাখা উচিত্ যাতে করে একজন ব্যক্তি হুইলচেয়ার নিয়ে পুরোপুরি ঘুরতে পারে। ওয়াশরুমে ও লেট্রিনে থাকা হ্যান্ডরেইল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে টয়লেট সিটে বসতে ও সেখান থেকে উঠতে সহায়তা করে।