ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খাদ্য নয় এমন সামগ্রীর বাড়তি চাহিদা তৈরি হতে পারে, যা তাদের বিশেষ ও সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটানোর জন্য দরকার হতে পারে।
চাহিদা নিরূপণ ও মূল্যায়ন পর্বে খাদ্য নয় এমন সামগ্রীগুলোর চাহিদা নিরূপণে দক্ষতা দেখানোর উপায় হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোন ধরনের সামগ্রীগুলো সবচেয়ে বেশি দরকার হয় এবং কী পরিমাণে দরকার হতে পারে সেই চাহিদা নিরূপণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গ্রুপের সাথে পরামর্শ ও আলোচনা করা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পূর্ব থেকে প্রস্তুতকৃত খাদ্য-নয় এমন সামগ্রীর প্যাকেজ বা কিটের মধ্যে কমপক্ষে ১০% কিটে নিচের জিনিসগুলো বাড়তি সংখ্যক যুক্ত করুন:
কুশন বা গদি (প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য কিংবা চলাফেরা ও নড়াচড়া কম এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বেডসোর বা পিঠে ঘা বা সংক্রমণ হওয়া থেকে জটিলতা এড়ানোর জন্য);
নড়াচড়া করতে পারেন না এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য শীতকালে অতিরিক্ত কম্বল ও পোশাক দেয়া;
কলম ও ছোট নোড প্যাড দেয়া, যা বধির কিংবা শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের গলায় ঝুলিয়ে রাখতে পারবেন এবং প্রয়োজনের সময় তারা লিখে যোগাযোগ করতে পারবেন;
বাড়তি কাপড়চোপড়: কারণ কৃত্রিম হাত, পা বা অন্য কোন অঙ্গ ব্যবহারকারী ও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাপড় ঘন ঘন ধোওয়ার দরকার হতে পারে, ফলে সেগুলো দ্রুত ছিড়ে যেতে পারে;
হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের গ্লাভস দেয়া যেতে পারে;
গোসল করার জন্য মগ বা এই জাতীয় কিছু, যা দিয়ে গোসল করার সময় গায়ে পানি ঢালা যাবে;
বিশেষ ধরনের রান্না করার তৈজসপত্র, ছোট আকারের বোয়াম/পাত্র এবং পানির পাত্র, অন্যান্য উপকরণ;
সাধারণ চামচ ও বাসনপত্র ছাড়াও স্ট্র দেয়া যেতে পারে যা পানি ও তরল খাবার খাওয়ার জন্য খুবই কার্যকরী;
ওয়াশরুম যাওয়া যাদের জন্য বেশি কঠিন তাদের জন্য বাড়তি স্বাস্থ্যবিধি উপকরণ রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে কী ধরনের সামগ্রী রাখতে হবে সেটা চাহিদা নিরূপণ করার সময় বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে ঠিক করতে হবে। এই সময়ে চর্চা ও সাংস্কৃতিক বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে এবং তাদের বয়স ইত্যাদি বিষয়কেও বিবেচনায় রাখতে হবে। এটি নিশ্চিত করুন যে নারী প্রতিবন্ধীরা সাবান, পানি, স্যানিটারি প্যাড বা মাসিকের জন্য কাপড়সহ ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি উপকরণ যেন পায়;
নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন, টুথব্রাশ, পেস্ট, কলম, চামচ, কাপ ইত্যাদি রাখার জন্য ঘরে বানানো বা শস্তা উপকরণের বা পুনর্ব্যবহার্য জিনিসপত্র দিয়ে হোল্ডার বা ধারক তৈরি করা যেতে পারে। যেমন নিচে আঁকা ছবিতে দেখুন সাধারণ সব জিনিসপত্র দিয়ে কীভাবে হোল্ডার বা ধারক তৈরি করা হয়েছে;
ক্রাচ এবং হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বহন করার ক্ষেত্রে ব্যাকপ্যাক সহায়তা করতে পারে;
কয়েক ধরনের কৃত্রিম হাত এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেগুলোর জোড়া দেওয়ার অংশগুলো বদলে বদলে ব্যবহার করা যায়।
জরুরি সহায়তার প্রথম পর্যায়ের শেষে অবশ্যই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে তাদের চাহিদা ও পরিপূরক আর কী কী ধরনের খাদ্য-নয় এমন সামগ্রী ব্যবহার দরকার হতে পারে আলোচনা করে জেনে নিন। এই ধরনের পরামর্শ সভা ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাবেশ ইত্যাদির মাধ্যমে জেনে নেওয়া যেতে পারে। এই ধরনের আলোচনা অবশ্যই যেন প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের সাথে করা হয় তা নিশ্চিত করুন। সম্ভব হলে নারী ও পুরুষদের সাথে পৃথক পৃথকভাবে আলাপ করুন। এই ধরনের আলোচনাতে মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধী ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্ত করুন, কারণ দেখা যায় যে বেশিরভাগ সময় তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এতে করে তাদের প্রয়োজনগুলো দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়। আর হ্যাঁ, তাদের জন্য পৃথক সভা আয়োজন করুন।