কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস গোত্রের একটি ভাইরাস যা ২০২০ সালে মহামারি আকারে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বেশ কয়েকটি কারণে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ও ভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে, এগুলো হলো:
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনেকের বিভিন্ন ধরনের অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে এবং/অথবা তারা বয়স্ক বা প্রবীণ ব্যক্তি যা তাদেরকে অধিকতর ঝুঁকির মুখে রাখে; আর সেই কারণে তাদের কঠোরভাবে নিজেকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ রাখা দরকার।
- শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা এবং নিজে নিজেকে আলাদা স্থানে আবদ্ধ রাখার কারণে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিশেষ করে শিশু প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক যাদের উচ্চ সহায়তার দরকার হয়, তারা স্বাভাবিক সহায়তা পাচ্ছে না।
- যে সকল ব্যক্তিরা অনানুষ্ঠানিক ও অবৈতনিক পারিবারিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল তারা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। অন্যদিকে, যারা অর্থের বিনিময়ে সেবা সহায়তা নিচ্ছেন কিংবা আবাসিক ব্যবস্থা ব্যবহার করছেন তারাও সেবাদানকারীদের কাছ থেকে সেবা পাওয়ার ব্যাপারে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সামাজিক বীমা বা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দ্বারা কম সুরক্ষিত থাকে এবং স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রেও তারা কম সুবিধা পায়। আর এর মূল কারণ হলো বৈষম্য। এছাড়াও কাজ থেকে তাদের দূরে রাখা হয় এবং কাজে থাকলেও তারা মূলত অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে যুক্ত থাকে। সবমিলিয়ে পুরো পরিস্থিতিই তাদের অনুকূলে থাকে না। ফলে তারা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য বীমার আওতায় খুব একটা সুবিধা পায় না।
- দারিদ্র্য ও গৃহস্থালীর উচ্চ খরচ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওষুধ ও মাসিকের পণ্যসহ স্বাস্থ্যবিধি পণ্যগুলো সংগ্রহ করাটা কঠিন করে তুলতে পারে; বিশেষ করে যখন পণ্যের চাহিদা ও দাম উচ্চ বা বাড়তির দিকে থাকে।
- জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য যেহেতু অব্যাহতভাবে সকলের জন্য প্রবেশগম্য এমন ফরমেটে দেওয়া হয় না, সে কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে।
-
পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত সুবিধাগলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কারো কারো জন্য প্রবেশগম্য নাও হতে পারে, যা তাদেরকে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে হাত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে বিরত রাখতে পারে।
সমস্যার সমাধানকালে সামগ্রিকভাবে সকল দিকগুলো বিবেচনায় রাখুন:
- সর্বসাধারণের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করার সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্যদের সাথে সমানভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে
- কোভিড-১৯ এর কারণে স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে তাদের অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য অবস্থার কারণে চিকিত্সা সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকা যাবে না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতাকে বিবেচনায় নিয়ে কোন ধরনের বৈষম্য করা যাবে না এবং প্রতিবন্ধিতার প্রতি স্বাস্থ্যকর্মীরা/স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে অধিকার ও সমতার ভিত্তিতে।
- প্রতিবন্ধীদের চাহিদার প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে টুইন ট্রাক অ্যাপ্রোচ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে
- প্রতিবন্ধীদের চাহিদার প্রতি সাড়া দেওয়ার বিভিন্ন ধাপে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের প্রতিনিধিত্বকালী সংস্থাসমূহকে যৌথ সভা এবং/ অথবা যাচাইকরণের মাধ্যমে যুক্ত করতে হবে
- কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য সকলের উপযোগী করে সবাই যাতে পেতে পারে এমনভাবে বিভিন্ন ধরনের ফরমেটে, ইশারা ভাষায়, সহজে পড়া যায়, এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে দিতে হবে
- সামাজিকভাবে আলাদাভাবে থাকার ফলে নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবগুলো অবশ্যই কমিউনিটির সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সমাধান করার উপায়গুলো খুঁজতে হবে, ব্যক্তিগত সহকারীদের কাজ ও সহকর্মীদের সহায়তার মাধ্যমে এবং দূরবর্তী স্থানের সাথে পর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং যে কোন ধরনের অপবাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে; এভাবে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে যেতে হবে।