বিতরণ করা
দুর্যোগের পরপরই তাত্ক্ষণিকভাবে যে ত্রাণ সামগ্রী দুর্গত এলাকায় পৌঁছায়, সেই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকালে দেখা যায় যে নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে প্রতিবন্ধীরা বাদ পড়ে যায়, তারা ত্রাণসামগ্রী পায় না; কারণ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের স্থান থেকে তাদের অবস্থানের দূরত্ব, ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহে আসা ব্যক্তিদের দীর্ঘ লাইন, ভিন্ন পরিবেশ এবং/অথবা তথ্যের অভাব। তারা হয়তো জানতেই পারে না যে এমন ধরনের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা ও উত্তরণের একটি উপায় হিসেবে নগদ এবং/অথবা ভাউচার দেয়াকে ক্রমবর্ধমানভাবে বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক বিতরণ পদ্ধতির জন্য এখানে নিচে কয়েকটি টিপস ও নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা হলো:
- রেশনকার্ড পদ্ধতি কেমন হবে সেই পরিকল্পনা করার সময় পরামর্শ করার জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের (নারী ও পুরুষ প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করুন) পরামর্শ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান;
- চাহিদা যাচাইকালে অবশ্যই নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তথ্য/ডেটা সংগ্রহ ভালোভাবে করতে হবে কারণ তথ্য সংগ্রহ যতো ভালো হবে অন্তর্ভুক্তিমুলক ও কার্যকর সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ততো বেশি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে;
- বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম (রেডিও, মুদ্রণ, ছবি ইত্যাদি) ব্যবহার করে বিতরণ সংক্রান্ত তথ্য এবং যোগাযোগ সহজলভ্য ও সকলের কাছে প্রবেশগম্য করতে হবে;
- বিতরণ স্থানটি নারী, পুরুষ, মেয়ে, ছেলে প্রতিবন্ধী, প্রবীণ নারী ও পুরুষ এবং শিশু প্রধান পরিবারসহ সকলের জন্য নিরাপদ, প্রবেশগম্য ও আয়ত্তাধীন হতে হবে;
- বিতরণ স্থানটি কোনমতেই ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট বা উচুঁ পাহাড়ি এলাকায় করা যাবে না; সবসময় চেষ্টা করতে হবে বিতরণ স্থানটি যেন একটি সমতল স্থানে হয় যেটা ঝুঁকিপূর্ণ নয় এবং সেখানে যেন পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে। পানি ও ময়লা আবর্জনা জমে না থাকে;
- ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র প্রবেশগম্য কিনা অবশ্যই আগেভাগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে: ধ্বংসস্তুপ বা অন্যান্য যা কিছু চলাচলের পথে বাধা তৈরি করে এমন সব কিছু সরিয়ে জায়গাটাকে সকলের জন্য প্রবেশগম্য করতে হবে, পরিচিতিমূলক চিহ্ন বা সাইনবোর্ড লাগাতে হবে এবং চলার পথ যাতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জায়গাটি যতোটা সম্ভব সমতল ও সাজানো গোছানো হতে হবে;
- স্থানটি যে সকলের জন্য প্রবেশগম্য সেটা বোঝাতে উপযুক্ত চিহ্ন/সাইনেজ ব্যবহার করুন;
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ফাস্ট-ট্রাক লাইন (যেটি অন্য লাইনের চেয়ে দ্রুতগতিতে আগাবে) এর ব্যবস্থা করুন যেখানে শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাই লাইনে দাঁড়াতে পারবে। এছাড়াও যাদের পক্ষে লাইনে দীর্ঘ সময় ধরে থাকা সম্ভব নয় যেমন প্রবীণ ব্যক্তি তাদেরকেও ফাস্ট ট্রাক লাইন ব্যবহার করতে দিন যাতে করে তাদের পক্ষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতোই দ্রুত সেবা পাওয়া সম্ভব হয়;
- বিতরণকৃত ত্রাণের জন্য ছোট ছোট প্যাকেট তৈরি করুন যাতে সহজে বহনযোগ্য এবং একসঙ্গে অনেক ত্রাণ না দিয়ে নিয়মিত ত্রাণ দিন;
- যে ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা নড়াচড়া করা স্বাস্থ্যগত কারণে সম্ভব নয় তাদের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা রাখুন;
- বিতরণ কেন্দ্রস্থলে যেন প্রবেশগম্য লেট্রিন ও পানি সহজলভ্য হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পানির পাত্র মাটি/ভূমি থেকে উচুঁতে স্থাপন করতে হবে যাতে করে পানির টেপটি সুবিধাজনক উচ্চতায় থাকে;
- পরিশেষে ত্রাণ বিতরণের স্থানের উপর নির্ভর করে বিতরণ কেন্দ্র ও লেট্রিনের মধ্যেকার পথে একটি দড়ি দিতে হবে যাতে করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলে সহায়তা করতে পারে। এখানে যারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আসবে তাদেরকে শুরুতে লেট্রিনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনে সহায়তা করতে হবে।
- এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বা মানসিক আঘাত বা মানসিক অসুস্থতা রয়েছে তারা বড় ধরনের ভীড়, উচ্চ শব্দ ও সামগ্রিকভাবে বিতরণ কেন্দ্রকে তাদের জন্য বিরক্তিকর মনে করতে পারে। তবে একথাও মনে রাখতে হবে যে, বিতরণ কেন্দ্র মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য একটি একটি ভালো উপায় হিসেবেও কাজ করতে পারে।